গ্যাস ওয়েল্ডিং এক প্রকার ধাতব পদার্থে জোড়া লাগানোর কৌশল। এর সাহায্যে একই জাতীয় বা ভিন্ন জাতীয় দুটি ধাতব পদার্থকে অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের ফ্রেমের মাধ্যমে তীব্র উত্তাপে জোড়া লাগানো হয়। এ অধ্যায় গ্যাস এর সংজ্ঞা, অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের ব্যবহার, ফ্রেমের প্রকারভেদ ও তাপত্রা, অজি অ্যাসিটিলিন মেটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, গ্যাস ওয়েন্ডিং রড ও ফ্লাক্স, গ্যাস ওয়েন্ডিং এ সাবধানতা ইত্যাদি আলোচনা করা হয়েছে।
গ্যাস ওয়েল্ডিং (Gas Welding)
অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের ফ্রেমের বা শিখার মাধ্যমে তীব্র উদ্ভাগে দুটি খাত পদার্থকে গলিয়ে পরস্পরের সাথে জোড়া দেওয়ার কৌশলকে গ্যাস ওরেজি বলা হয়।
গ্যাস ওয়েন্ডিং করার ক্ষেত্রে জোড়া দেওয়ার ধাতব পদার্থ দুটিকে অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের মিশ্রণের অগ্নিশিখা দ্বারা উত্তপ্ত করা হয়ে থাকে। তাই গ্যাস ওয়েন্ডিং করার ক্ষেত্রে অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন এ দুটি প্যাস একান্ত অপরিহার্য। এ দুটি গ্যাসের মিশ্রিত অগ্নিশিখা বা ফ্রেম তীব্র উত্তাপের সৃষ্টি করে ধাতব পদার্থকে গলিয়ে ফেলে এবং গলিত দুটি পদার্থের ধাতু মিলিত হয়ে ধাতু দুটির মাঝে জোড়া লাগিয়ে নেয়। সাধারণ ২৫০ মি.মি. পুরু ধাতব পাতকে এ ধরণের অক্সি-অ্যাসিটিলিন গ্যাসের দ্বারা ওয়েল্ডিং করে জোড়া দেওয়া হয়। খুব পাতলা ধাতু হলে এর জন্য কোনো ফিলার ম্যাটেরিয়াল লাগে না। তবে ধাতব পাত ১.৫ মি.মি. এর চেয়ে বেশি মোটা ফলে একই ধাতুর তৈরি সরু কাঠির মতো কিলার ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন হয় ।
ক) ফ্রেমের প্রকারভেদ:
শিখা বা ফ্রেমের নিয়ন্ত্রণের ওপর ভিত্তি করে ফ্রেমকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১) কার্বুরাইজিং বা রিডিউসিং ফ্লেম (Carburising/Reducing Flame)
২) নিউট্রাল মে (Nutral Flame)
৩) অক্সিডাইজিং ক্লেম (Oxydising Flame)
গ্যাস রেভিং বিশেষ করে অস্তি অ্যাসিটিলিন গ্যাস যারা ওরেন্টিং কাজে যে সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা। হয় তাদের নাম ও বর্ণনা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
ক) অক্সিজেন সিলিন্ডার (Oxygen Cylinder)
অক্সিজেন সিলিন্ডার বিভিন্ন রতনের হয়ে থাকে। সাধারণত ২.২৫ দশ মিটার থেকে ৩.২৩ ঘন মিটার আয়তনের অক্সিজেন সিলিন্ডার দেখা যায়। এ সিলিন্ডারে ২১° C তাপমাত্রার ১৫০ গ্রাম/ বর্গ সে.মি. তাপে বা প্রেসারে অক্সিজেন রাখা হয়। সিলিন্ডারের মাথার একটা প্রেসার তালত থাকে যা একটা হুইলের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। উচ্চ চাপে যাতে সিলিন্ডার ফেঁচে না যায় তার জন্য একটা সেফটি 'রিলিজ ভিক্ষ থাকে । সিলিন্ডারে চাপ বেশি হলে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চাপ দের করে দেয়। এর তালত একটা নিরাপত্তা ক্যাপ যারা সংরক্ষিত থাকে। বিভিন্ন ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার বিভিন্ন রং এর হয়ে থাকে। অক্সিজেন সিলিতার সাধারণত কাল অথবা সবুজ রং-এর হয়ে থাকে।
খ) জ্যাসিটিলিন সিলিন্ডার (Acetylene Cylinder)
অ্যাসিটিলিন সিলিন্ডারে সাধারণত ১৭ কেজি /বর্গ সে.মি. চাপে বা প্রেসারে অ্যাসিটিলিন গ্যাস সংরক্ষণ করা হয়। অ্যাসিটিলিন গ্যাস ১ কেজি/ বর্গ সে.মি. এর চেয়ে বেশি চাপে যুক্ত পরিবেশে রাখা হলে বিস্ফোরিত হতে পারে। এ গ্যাস প্রতি বর্গ সে.মি. এ২ কেজি চাপে স্বয়ং জিন্নভাবে বিস্ফোরিত হতে পারে। তাই এ থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এ গ্যাम লিকুইড অ্যাসিটোনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। বেশি উচ্চ চাপে যাতে সিলিয়ার ফেঁটে না যায় তার জন্য এ সিলিভারে নিরাপত্তামূলক সেফটি প্রাগ লাগানো থাকে। নিশিতা চাপ ১০ C ত্রার উঠনে এটা স্বরজিনাভাবে চাপ রিলিজ করে দেয়। অ্যাসিটিলিন সিলিন্ডার সাধারণত মেরুন বা লাল রং-এর পরে থাকে। সিলিন্ডার সব সময় খাড়াভাবে এবং প্রেসার রেডনেটর উর্বসুখী রাখা প্রয়োজন।
গ) ওয়েন্ডিং টর্চ (Welding Tarch)
ওয়েন্ডিং টর্চ গ্যাস ভরেন্ডিংএর ক্ষেত্রে একটা অপরিহার্য অংশ। এটি একটা ছোট হাত যয় বা গোলাকার লম্বা এবং অভাগ ক্রমশ সরু। এটার পিছন দুটি সিলিন্ডারের গ্যাস লাইন সংযুক্ত করা থাকে এবং সামনের দিকে সরু দিয়ে গ্যাসের মিশ্রণের অগ্নিশিখা বের হয়। এতে অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাস সঠিকভাবে মিশ্রিত করার ব্যবস্থা আছে। একটা ওয়েন্ডিং টর্চ-এর যে সব অংশ তাকে তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
১) ডি (Body)
২) নিল ভাল (Niddle Valve)
৩) নজল (Nozzle)
৪) হাতল বা স্লিপ (Grip)
ঘ) প্রেসার রেগুলেটর (Pressure Regulator)
সিলিন্ডারের উচ্চ চাপের গ্যাস ওয়েন্ডিং টর্চ বা ব্রো-পাইপে সরবরাহ করার আগে গ্যাসের চাপ প্রেসার রেগুলেটর দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সিলিন্ডারের সাথে রেগুলেটরগুলোর ভুল সংযোগ থেকে রক্ষা পাওয়া এবং নিরাপত্তা বিধানকল্পে সিলিন্ডার সংযোগের গ্রেড বা প্যাচ ভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। প্রেসার রেগুলেটর সাধারণত চার রকমের হয়ে থাকে। যেমন
১) সিংগল স্টেজ নজন টাইপ (Single Stage Nozzle Type)
২) সিংগল স্টেজ স্টেম টাইপ (Single Stage Stem Type )
৩) টু স্টেজ নজল টাইপ (Two Stage Nozzle Type)
৪) হাই ক্যাপাসিটি হাই প্রেসার টাইপ (High Capacity High Pressure Type)
ঙ) হোজ ও হোজ ফিটিংস (Hose & Hose Fittings)
সিলিন্ডারের রেগুলেটর ও ওয়েল্ডিং টর্চ বা রো-পাইপের মাঝে ফ্লেক্সিবল হোজ পাইপ দিয়ে সংযুক্ত করা থাকে। উচ্চ চাপের গ্যাস সরবরাহ করার কারণে এসব হোজ পাইপ ও সংযুক্ত কিটিংগুলো বিশেষভাবে উচ্চ চাপ সহ্যকারী হিসেবে তৈরি করা হয়ে থাকে। অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাস লাইনের জন্য সব সময় পৃথক পৃথক রং এর হোজ পাইপ ব্যবহার করা হয়। অক্সিজেন হোজ পাইপ সব সময় কাল এবং অ্যাসিটিলিন হোজ পাইপ সব সময় লাল রং এর হয়ে থাকে।
ক) গ্যাস ওয়েল্ডিং রড (Gas Welding Rod)
গ্যাস ওয়েল্ডিং এ তীব্র উত্তাপে ধাতু গলে ও পুড়ে গিয়ে যে ফাঁক সৃষ্টি করে তা পূরণের জন্য ওয়েল্ডিং রড বা ফিলার রঙ ব্যবহার করা হয়। এ সব রড চিকন কাঠির মতো এবং যে ধাতুতে ওয়েল্ডিং করা হয় সেই একই ধাতব পদার্থের তৈরি হয়ে থাকে।
খ) গ্যাস ওয়েল্ডিং ফ্রান্স (Gas Welding Flux)
ফ্লাক্স হচ্ছে এক প্রকার রাসায়নিক পদার্থ যা ওয়েন্ডিং এর সময় ধাতব সারফেসে ডি-অক্সিডাইজিং (De Oxydising) এর কাজ করে। এর ফলে গলিত ধাতুতে স্লাপ জমতে পারে না এবং ওয়েন্ডিং মসৃণ ও সুন্দর হয়
গ্যাস ওয়েল্ডিং কার্যপদ্ধতি
গ্যাস ওয়েন্ডিং কার্যপদ্ধতির ধাপগুলো নিম্নরূপ :
১. ওয়েল্ডারকে কাজের উপযুক্ত পোশাক পরিধান করে প্রয়োজনে (আর্ক ওয়েল্ডিং এ) হেলমেট বা হ্যান্ডশীল্ড ব্যবহার করতে হবে।
২. জবের উপর হতে গ্রিজ, তেল, মরিচা, বালি ইত্যাদি পরিষ্কার করতে হবে।
৩. লে-আউট অনুযায়ী প্রয়োজনে জবের পার্শ্বদেশ প্রস্তুত করতে হবে ।
৪. জবের গুরুত্ব, জোড়ার ধরন এবং ইলেকট্রোডের পরিমাপের উপর নির্ভর করে কারেন্ট নির্ধারণ করতে হবে।
৫.ধাতুর ধরন অনুষয়ী নিউট্রাল, অক্সিডাইজিং বা কার্বুরাইজিং শিখা নির্বাচন করতে হবে ।
৬. ধাতব খণ্ডকে সঠিক স্থানে রাখার জন্য এবং উত্তাপে জোড়া যাতে বাঁকা না হয় সেজন্য জবের দুই বা তিন স্থানে ট্যাক নামে ছোট ছোট ওয়েন্ড করে নিতে হয়ে ।
৭. আর্কের দৈর্ঘ্য ঠিক রেখে সঠিক কোণে ইলেকট্রোড ধরতে হবে এবং সঠিক গতিতে পরিচালনা করতে হবে।
৮. একটি রান টানার পর আরেকটি রান টানার পূর্বে স্লাগের আবরণ পরিষ্কার করতে হবে।
গ্যাস ওয়েন্ডিং এ নিম্নোক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত :
ক) গ্যাস এ নিরাপত্তা পোশাক (যেমন- অ্যাপ্রোন, নিরাপদ চশমা, হ্যান্ড গ্লোভসু, ইত্যাদি) পরে ওয়েল্ডিং কাজ করতে হয়।
খ) গ্যাস সিলিন্ডার ভালভ খোলার আগে রেগুলেটর অ্যাডজাস্টিং ক্রু সম্পূর্ণ ঢিলা আছে, এটা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে।
গ) ওয়েল্ডিং টর্চ জ্বালানোর কাজে স্পার্ক লাইটার ব্যবহার করা উচিত। কখনো দেওয়াশলাই ব্যবহার করা উচিত নয়।
ঘ) ওয়েল্ডিং এর পর পরই ওয়েল্ডিংকৃত স্থানে হাত দেওয়া উচিত নয়। এতে হাত পুড়ে যেতে পারে।
ঙ) অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাস সিলিন্ডার খুব নিরাপদ স্থানে রাখা উচিত। এগুলো কখনো উত্তাপ, তেল বা কোনো দাহ্য পদার্থের সংস্পর্শে আনা উচিত নয়।
চ) ব্যবহারের পর সিলিন্ডার ভালভ ও রেগুলেটিং ক্রু বন্ধ করতে হবে এবং ওয়েল্ডিং টর্চ নির্দিষ্ট হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
ছ) রেগুলেটর অ্যাডজাস্টিং ক্রুতে কখনো তেল দেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে।
অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. গ্যাস ওয়েল্ডিং কী ?
২. ফ্রান্সের কাজ কী ?
৩. ওয়েল্ডিং টর্চ কী ?
৪. অক্সিডাইজিং শিখা কী ?
৫. গ্যাস ওয়েল্ডিং রড বা ফিলার রড কী?
৬. গ্যাস ওয়েল্ডিং এর শিখা তৈরিতে কী কী গ্যাস ব্যবহার করা হয় ?
৭. হোজ ও হোজ ফিটিংস কী ?
৮. প্রেসার রেগুলেটর এর কাজ কী ?
সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন
১. কার্বুরাইজিং শিখা কীভাবে উৎপন্ন হয় ?
২. নিউট্রাল বা নিরপেক্ষ শিখার তাপমাত্রা কত ?
৩. ফ্লাক্স কিসের সাহায্যে তৈরি করা হয় ?
৪. অক্সিজেন ও অ্যাসিটিলিন গ্যাসের ব্যবহার উল্লেখ কর।
৫. ফ্লেম বা শিখা কত প্রকার ও কী কী ?
৬. ফ্রেমের তাপমাত্রা উল্লেখ কর ।
৭. অক্সি-অ্যাসিটিলিন সেটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের তালিকা তৈরি কর।
৮. গ্যাস ওয়েন্ডিং রড ও ফ্লাক্স সম্পর্কে বর্ণনা কর।
৯. প্যাস ওয়েন্ডিং রড ও ফ্লাক্স সম্পর্কে বর্ণনা কর ।
১০. প্রেসার রেগুলেটর কত প্রকার ও কী কী ?
রচনামূলক প্রশ্ন
১. গ্যাস ওয়েল্ডিং-এ সাবধানতার তালিকা তৈরি কর ।
২. অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অ্যাসিটিলিন সিলিন্ডার সম্পর্কে বর্ণনা দণ্ড ?
৩. গ্যাসওয়েল্ডিং করার কৌশল বর্ণনা কর।